বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল মহানগরীর নগরবাসীর দুর্ভোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে।প্রায় প্রতিনিয়তই নগরবাসী নাজেহাল হচ্ছেন । এসবের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সুস্থ্য নাগরিক জীবন ব্যবস্থাও । দেখা যাচ্ছে যে, ঘণ্টায় মাত্র ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও মহানগরীর বেশিরভাগ রস্তাঘাট পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। আরও দেখা যায় এর চেয়ে আর একটু বেশি বৃষ্টি হলে নগরীর নবগ্রাম রোডসহ কয়েকটি রাস্তায় জাল ফেলে মাছ শিকার করেন হতভাগ্য নগরবাসী। নগর প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে নজর দেয়ার সময় আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন ওঠছে নগরবাসীর মনে।
জনবলসহ সরঞ্জামাদির কোন ঘাটতি না থাকলেও বরিশাল নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি শাখার দ্বারা সুস্থ্য ও স্বাস্থ্য সম্মত নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিত হচ্ছে না। নগর পরিষদের তরফ থেকে সন্ধ্যার পরেই নগরীর রাস্তাঘাট থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারসহ ড্রেনগুলো দিনের বেলা পরিস্কার করার নির্দেশনা থাকার পরও সে আলোকে কাজ হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে বিকেল হলেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইমারি ডাম্পিং পয়েন্টে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ উঁচু হতে শুরু করে। সিটি করপোরেশনের ট্রাকগুলো ময়লা অপসারণ শুরু করে সন্ধ্যার আগে-পড়ে। ফলে অনেক এলাকার রাস্তাঘাট দিয়েই বিকেলে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে পথচারীদের। নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার এর চেয়েও নাজুক পরিস্থিতি । এসবের ফলে পেটের খাবার গলা দিয়ে বের হয়ে আসছে।
সময়মত পরিস্কার করা হচ্ছে না বরিশাল নগরীর প্রায় সোয়া ৩শ’ কিলোমিটার ড্রেনের প্রায় পুরোটাই । প্রায় একই অবস্থা এর মধ্যেকার প্রায় ২শ’ কিলোমিটার পাকা ড্রেনেরও । অথচ একটু নজর দিলেই পাকাড্রেনগুলো পরিস্কার রাখা খুব সহজ। এসবের কারণে মাঝারি বৃষ্টিতেও এ নগরীতে প্রতিনিয়ত অবরুদ্ধ হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা যা সচল রাখাও কিছুটা সহজতর। সরেজমিনে দেখা যায়, এ নগরীর নবগ্রাম রোড, ফকিরবাড়ি রোড, বগুড়া রোডসহ আরো কিছু সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পাশাপাশি এসব সড়কের পাশে পাকা ড্রেনের বেশিরভাগই আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অবরুদ্ধ।
বরিশালের সাধারণ নগরবাসীর অভিযোগ বেশিরভাগ কাঁচা-পাকা ড্রেনই সময়মতো পরিস্কার হচ্ছে না। যারফলে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটগুলো পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ড্রেনের পানি অপসারণের পথ না থাকার কারণে তা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের ঘরে ঢুকছে। ফকিরবাড়ি রোড, বগুড়া রোড, গোড়াচাঁদ দাশ রোডেও পানি থৈ থৈ করে মাঝারি বর্ষণে।
এসব সড়কের পাশেও পাকা ড্রেন রয়েছে। প্রতিটি ড্রেনের সাথেই নগরীর পাশে বহমান কির্তনখোলা নদীর সংযোগ থাকলেও তার বেশিরভাগ পথই রুদ্ধ। গত ৪ আগস্ট ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ২ দফায় প্রায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ সড়কেই পানি জমে যায়। এমনকি ৪ দিন পরেও নবগ্রাম রোডের পাশের ড্রেনের পানি আটকে ছিল। গত ১৯ আগস্ট থেকে প্রবল বর্ষণ আর কীর্তনখোলার জোয়ারে নগরীর প্রায় ৭০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হলেও সে পানিও সময় মতো অপসারণ হয়নি। কিন্তু এরপরেও নগরীর ড্রেনগুলোতে আটকে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেই।
এসব প্রসঙ্গে সিটি করোপরেশনের কনজার্ভেন্সি শাখার দায়িত্বরত প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক ডা. রবিউল আলম এর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান যে, সিটি করপোরেশন এর পক্ষ থেকে সব সময়ই নগরীর ড্রেনসমূহ পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নগর ভবনের চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলেও তিনি জানান। তবে এবার কয়েক দফা ভারী বর্ষণে নগরীতে পানি জমে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তা দ্রুত অপসারণ করা গেছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবী করেন।